একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে বামপন্থীদের হেয় করা বিষয়ে একেবারেই ব্যক্তিগত মতটা বিনয়ের সাথে বলি।
বিজ্ঞাপনটি যারা বানিয়েছেন, তাদের রুচি কিংবা জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার যে কারোরই আছে। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনের কারণে গণমানুষের সংগ্রাম বা অর্জন বৃথা হয়ে যায় না। বিজ্ঞাপন নির্মাতা,প্রচারকারী ইত্যাদি সকলকে ক্ষমা চাওয়া বা বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করার যে দাবিটি জানানো হয়েছে, সেটি তাই আমার নিজের জায়গা থেকে পছন্দ হয়নি। আমার মতাদর্শকে খাটো করার অধিকার আরেকজনের থাকবে, এইটুকু সহিষ্ণুতা সমাজে দরকার। রুচির দিক থেকে সেটা যা দেখিয়েছে, তার দায়দায়িত্বও তো তারই।
এমন একটা নাটকও দেখেছিলাম, গল্পটাও পড়েছি। হাস্যকর, অতিসরলীকরণ এবং বলা যায়, আওয়ামী গুণ্ডাতন্ত্রকে জায়েজ করতে বামপন্থীদের যেভাবে উপস্থাপন করা সুবিধাজনক, সেটাই সেখানে ছিল। কিন্তু কখনো মনে হয়নি, নাটকটাকে বন্ধ করে দেয়া দরকার। বরং সেখানে কিছু শক্তিশালী ভাষার ব্যবহার আছে, আছে কিছু নাটকীয়তার গুন, সেটাও বলে রাখছি। শত্রুর এত শক্তিশালী অস্ত্র আছে, মিত্রদেরও তাই নিন্দার বাইরে অন্য ভূমিকা থাকবে, এই প্রত্যাশাও করছি।
এগুলোর প্রতিবাদও বিশিষ্টজনেরা করবেন, সেটাও প্রয়োজন। কিন্তু নিষিদ্ধ, প্রত্যাহার, ক্ষমাপ্রার্থনা, গালিগালাজ ইত্যাদির সংস্কৃতি যতদূর সম্ভব এড়িয়ে যাওয়াটাই বরং দরকার। পালটা মস্কারা হোক, পণ্য বর্জনও হয়তো চলতে পারে। সেসবই এই বিজ্ঞাপন কিংবা নাটক যে ভুল বার্তা সমাজে দিতে চায়, তাকে মোকাবেলা করার সভ্য পথ।
এর বাইরে আরও একটা কথা বলি, শুধু কী প্রয়াত কার্ল মার্কসের মর্যাদা রক্ষাই তার দর্শনকে রক্ষা করতে যথেষ্ট!?
আমাদের পাশেই যে তরুণরা বিকল্প একটা সমাজ নির্মাণে, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি নির্মানে, অর্থনীতির বিকাশে, পরিবেশ রক্ষায়, মাতৃভাষায় শিক্ষার বিস্তারে, চলচ্চিত্র আর শিল্প সাহিত্যে নতুন জোয়ার আনার যে সম্ভাবনাগুলোকে তুলে ধরে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে আছে, তাদের নিয়েও কিছু কথাবার্তা তো হোক, সমালোচনা কিংবা পর্যালোচনা হোক। আমরা প্রায়ই অতীতের সংগ্রামীদের মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে চারপাশের জীবন্ত চেষ্টাগুলোকে ভুলে থাকি।
দেখে আসছি তাই গত আঠারো বছর ধরে, সদ্যপ্রয়াত শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদদের নিয়ে যত কথা হয়, তার কানাকড়ি হয় না বাস্তবের রাজনীতি নিয়ে। শাসকদের কাজকর্মের আরামদায়ক নিন্দা তো করাই যায়, বিকল্প কর্মসূচিগুলো যারা কম কিংবা বেশি দেখায়, সেগুলো নিয়ে আলাপ কোথায়?
আমার তো মনে হয় কার্ল মার্কস বেঁচে থাকলে এই বিজ্ঞাপন কিংবা নাটক বন্ধ করতে বলতেন না, বরং রাষ্ট্রবিজ্ঞান-দর্শন-সমাজবিজ্ঞানের উৎসুক ছাত্র হিসেবে আলাপ করতেন এই ইশতেহারগুলো নিয়ে। কেননা তিনি অতীত কিংবা বর্তমানের পর্যালোচনা করেন ভবিষ্যতের দিকে চোখ রেখে।