‘EXTRACTION’ দেখলাম। এই সিনেমা দেইখা আমি অনেককিছু শিখতে পারছি যা গত একত্রিশ বছরের জীবনেও শিখি নাই।
** সর্বপ্রথমে শিখছি ‘আল্লাহ সার্ভ শক্তিমান’। সিএনজির গায়ে লেখা এ লাইন দেখে দুটো রাম ঢেকুর তুলে বলেছিলাম-‘ওক্কে, খেলা হপে। চলুক!’ (কিন্তু সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো!)
** এরপরে দেখলাম সুলতানা কামাল ব্রিজ দিয়া হাসিনা পরিবহন সার্ভিস চলে। (কিন্তু সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো!)
** রাতের বেলা মঙ্গল শোভাযাত্রার বিষয়টা খুবই কিউট ছিলো! (কিন্তু সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো!)
** তারচেয়েও কিউট ছিলো বাংলা ডায়ালগ। এই দুর্ধর্ষ ডায়ালগ ‘পুরান ঢাকায় বেড়ে ওঠা’ আমাকে শৈশবে নিয়ে গিয়েছিলো। নস্টালজিক ব্যাপারস্যাপার!! এই কথার টান কোন অঞ্চলের এটা বুঝতে পরে অবশ্য গুগল, ডিকশনারী নিয়ে বসছিলাম, লাভ হয় নাই, খুঁজে পেলাম না। (কিন্তু সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো!)
** রাস্তার তলের নর্দমা সিনটা অসাধারণ দুর্দান্ত! অথচ ম্যানহলের ঢাকনা খুলে যখন কাজ করতো মানুষজন, ছোটবেলায় উঁকি দিতাম, এত পাতলা ময়লা জীবনেও দেখি নাই। ডিরেক্টরের উচিত ছিলো সিনেমার অভিনেতা (এবং প্রডিউসার) Chris Hemsworth কে আসল অভিজ্ঞতা দেয়া। পুরান ঢাকার আসল নর্দমায় শুটিং করলে তিনি বুঝতে পারতেন যে ওইখানে ঢোকা আসলেই একটা ঐতিহাসিক বাস্তবতা, সবকিছু ঘুট পাকায়ে একটা দারুণ ফ্লেভার হয়ে থাকে। সেজন্য অবশ্য তার বাংলাদেশে আসা লাগতো। (কিন্তু সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো!)
** নায়ক যেদিকে যায় সেদিকেই হিন্দি গান বাজে, এ বিষয়টাও সুইট! অস্বীকার করা যাবে না যে পুরান ঢাকাতে আসলেই হিন্দি গান শোনার চল আছে। তাই বলে ঘরে ঘরে এভাবে হিন্দি গান সেধিয়ে দিয়ে বিষয়টারে কেমন ‘কলকাতামুম্বাই’ বানিয়ে ছেড়েছে। (কিন্তু সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো!)
** সবশেষে ঢাকাকে যেভাবে হলুদ হলুদ ক্যামেরায় দেখানো হইছে তাতে মনে হচ্ছিলো ঢাকা শহরে কোন ভয়ানক ভাইরাস/এলিয়েন এট্যাক করে শহরের বায়ুর রং পরিবর্তন করে দিছে! (কিন্তু সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো!)
** সিনেমা দেখা শেষে মনে হইলো-‘ সিনেমার স্ক্রিপ্ট অপুষ্টিতে ভুগছে! আরেকটু পুষ্টিকর সুষম খাবার খাইয়ে এর দিকে নজর দেয়া উচিত ছিলো।’ (কিন্তু সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো!)
** মাইরি বলছি, সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো। ট্রাক দিয়ে ধাক্কা দিয়ে রনদিব হুদার নাক ভেঙে দেয়া দেখে কোন কারণ ছাড়া একটা স্লোগান মাথায় চলে আসছিলো ‘স্বৈরাচারীর কালো নাক ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও!’ এদিকে ছোট ছোট পোলাপাইনের হাতে অস্ত্র দিয়ে ‘কুত্তার বাচ্চা, মাইরা ফালামু তোরে!’ বলার সাথে সাথে নায়কের স্নেহসুলভ চাহনী দেখে নায়ককে আসলেই নায়ক মনে হইছে!! দুটো থাপ্পড় দিয়ে পিচ্চিসন্ত্রাসদের সে কাবু করে ফেলেছে! স্বাভাবিক, বড় সন্ত্রাসের ঘুষি লাগলে বাচ্চাসন্ত্রাসের থাপ্পড়ই যথেষ্ট হবার কথা! (সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো!)
ওকে, ওকে। একশান নিয়ে কোন কথা হবে না, কারন সিনেমার একশান দুর্দান্ত ছিলো! যারা একজনের হাতে এত আর্মি-পুলিশ-র্যাব মরতে দেখে ‘ফালতু’ বলতেছেন তারাই আবার তামিল সিনেমার ভক্ত! যেইখানে নায়ক ফু দিলে ভিলেন উড়ে যায়! আপনাদের কী আর্মি-পুলিশ অনুভূতিতে আঘাত লাগছে! নাকি আপনারা জানেন না বহু একশান ঘরানার মুভি আছে যেগুলো এই টাইপ ফ্যান্টাসীতে পরিপূর্ণ!
তোরা কেউ আমার দুইঘন্টা ফিরিয়ে দে, আমি তোদের ‘পুরান ঢাকা’র এক প্লেট হাজির বিরিয়ানি খাওয়াবো!!