গত বছরের ৫২ সপ্তাহে সিনেমা মুক্তি পেয়েছে ৫০+। যদি সিনেমা প্রেমী আর চলচিত্র শিল্পের উন্নয়নে এই সংখ্যা নেহায়েতই কম! তারপরেও ২০১৮ সাল টা বাংলা চলচিত্রের জন্য একটি মাইলফলক বছর হিসেবে থাকবে। কারণ শেষ কবে এমন একটা বছর গেছে যে বছরে এতো গুলো ভালো ভালো চলচিত্র মুক্তি পেয়েছে?
মনে করতে হলে আমার মতোই সাধারণ দর্শকদের একটু গভীর ভাবনায় যেতে হবে। মাটির প্রজার দেশে, দহন, দেবী, স্বপ্নজাল, পোড়ামন-২, কালের পুতুল, আলতা বানু, কমলা রকেট, পাঠশালা এর মত দুর্দান্ত কিছু সিনেমা পেয়েছি। এই পাওয়ার ফলে স্বভাবতই দর্শকের ঘুমন্ত চাহিদা আবার জেগে উঠেছে। সেই চাহিদা ২০১৯ কতটা পূরণ করতে পারবে তার কিছু পূর্বানুমান না করে চলুন দেখে আসি এই বছর দর্শকের জন্য কি কি সিনেমা থাকছে…?
ফাগুন হাওয়ায়ঃ বছরের শুরুর দিকেই আসছে ই সিনেমা। আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা হলেও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা হয় নাই এখনো। তবে সেই আক্ষেপের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে এই বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি। তৌকির আহমেদ পরিচালিত সিয়াম, তিশা, ভারতের যশপাল শর্মা অভিনীত ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমা। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ছবি ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ২০১৯ সালের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলোর একটি। টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পের অনুপ্রেরণায় নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা।
যদি একদিন: তাহসানের বড় পর্দায় অভিষেক এই সিনেমা দিয়ে। সাথে আছে ‘ঢাকা এট্যাক’ এর ভিলেন তাসকিন ও ওপার বাংলার সুন্দরী নায়িকা শ্রাবন্তী। রোমান্টিক ঘরানার এই সিনেমা পরিচালনা করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় পরিচালক মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল রাজ। রাজের সিনেমার একটা ব্যাপার খুব ভালো থাকে তা হল তার সিনেমার জ্ঞান গুলো। খুবই শ্রুতিমধুর হয় আর সাথে যখন সিনেমার কনসেপ্ট হিসেবে রোমান্টিক টানাপড়েন তখন তা সোনায় সোহাগা হবে বলেই দর্শকের বিশ্বাস। মুক্তি তারিখ এখনো ঠিক না হলেও এই ফেব্রুয়ারি তেই মুক্তি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
শনিবার বিকেল: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নামটা আমাদের দেশে একটা ব্র্যান্ড। কোন সিনেমা, নাটক কিংবা বিজ্ঞাপনের পেছনে যদি তার নাম থাকে তা চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় যে ভালো কিছু হবেই হবে যার প্রমাণ তিনি অতীতে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ-ভারত-জার্মান এই ত্রিদেশীয় যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র এটি যদিও ২০১৮ সালেই মুক্তি পাবে বলে শোনা গিয়েছিলো! জাহিদ হাসান, পরমব্রত, তিশা এবং ফিলিস্তানি অভিনেতা ইয়াদ হয়রানি অভিনীত এই সিনেমার কাস্টিং দেখে যে কেউ ভালো কিছুর আশা করতেই পারেন। আর সবচেয়ে বড় কথা ২০১৬ সালে গুলশানে ঘটে যাওয়া হলি আর্টিজন জঙ্গি হালমা নিয়েই এ ছবির প্লট। তাই গত বছর যখন ছবির শুটিং শুরু হয়েছিল তখন থেকে শনিবারের বিকেল নিয়ে মাতামাতি হয়েছিল। চলতি বছরের সুবিধাজনক সময়ে এই সিনেমা মুক্তি দেয়া হবে বলে দর্শকের বিশ্বাস।
নোলক: শাকিবের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সিনেমার নাম বললে অবশ্যই এই সিনেমার নাম নিতে হবে। নানারকম জটিলতার কারণে এই সিনেমা মুক্তি পিছিয়ে যাচ্ছিলো। খুব সম্ভবত এই বছর সিনেমাটি মুক্তি পাবে বলেই আশা করা হচ্ছে। ছবিতে শাকিব খানের লুক ও ছবির নানা টুইস্টের কারণে নির্মাণের শুরু থেকে ব্যাপক আলোচিত ছিল। সিনেমায় নায়িকা হিসেবে আছেন চিত্রনায়িকা ববি আর পরিচালকের জায়গায় সাকিব সনেট। সিনেমার শুটিং শেষ হয়ে এখন সেন্সরের অপেক্ষায় আছে।
বিউটি সার্কাস ও ফুড়ুৎ: আমাদের দেশে গুণী অভিনেত্রী জয়া আহসান ওপার বাংলায় দুর্দান্ত জনপ্রিয়। গত বছর তার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘দেবী’ দর্শকের মনে আলোড়িত হয়ে আছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই বছর তার নিজের প্রযোজিত দ্বিতীয় সিনেমা ‘ফুড়ুৎ’ নিয়ে আসবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আরেকটি সিনেমা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিলো মুক্তি পাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। মাহমুদ দিদার পরিচালিত ‘বিউটি সার্কাস’ সিনেমার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করেছিলেন জয়া আহসান সেই সিনেমা এই বছর মুক্তি পাবে। জয়া ছারাও এই ছবিতে এবিএম সুমন, তৌকির আহমেদ, ফেরদৌস সহ আরও অনেকে।
সাপ লুডু: গত বছর নায়ক আরেফিন শুভ কিংবা নায়িকা বিদ্যা সিনহা মীম দুজনেই লাইম লাইটে ছিলেন না। তবে এই বছর মনে হচ্ছে দুই জনেই ফিরে আসবেন স্ব মহিমায়। তাদের নতুন একসাথে জুটি হয়ে সিনেমা ‘সাপ লুডু’। ছোটপর্দার নামী নাট্যনির্মাতা গোলাম সোহরাব দোদুল ‘সাপলুডু’ দিয়ে প্রথমবার বড় পর্দায় আসছেন। সিনেমার শুটিং শেষ হয়েছে কিন্তু এই সিনেমা স্থিরচিত্র বা অন্যান্য কিছু যেন প্রকাশ না পায় তার দিকে প্রচণ্ড খেয়াল রেখেছিলেন পরিচালক। এতো রাখঢাক করে রাখা চলচিত্রের জন্য আগ্রহ একটু বেশিই থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
মেইড ইন বাংলাদেশ: নির্মাতা রুবাইত হোসেন কে মনে আছে? ‘মেহেরজান’ কিংবা ‘আন্ডার কন্সট্রাকশন’ সিনেমার কথা তো নিশ্চয়ই মনে আছে! হুম, নির্মাতা রুবাইত হোসেন তার তিন নম্বর সিনেমা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নিয়ে আসছেন এই বছর। ফ্রান্স, ডেনমার্ক, পর্তুগাল ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রের মূল অর্থায়ন এসেছে ফ্রান্স সরকারের সিএনসি ফান্ড, নরওয়ে সরকার প্রদত্ত সোরফন্ড প্লাস, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রদত্ত ইউরিমাজ ফান্ড ও ডেনমার্কের ড্যানিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট ফান্ড থেকে। এছাড়াও ২০১৭ সালে লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবের ওপেন ডোরস-এ অংশ নিয়ে এই ছবির চিত্রনাট্যের জন্য জিতে নিয়েছে আর্টে ইন্টারন্যাশনালের নগদ পুরস্কার। রিকিতা নন্দিনী শিমু, দীপান্বিতা মার্টিন, মুস্তাফা মনোয়ার, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়রাজ, মোমেনা চৌধুরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও সামিনা লুৎফা অভিনীত এই সিনেমা এই বছর মুক্তি পাওয়ার কথা।
উপরের সিনেমা ছাড়াও গত বছরের ছবি বেপরোয়া রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়, (রায়হান রাফী+সিয়াম+পূজা+রোশান) অভিনীত নতুন সিনেমা, ঢাকা এট্যাক এর সিক্যুয়াল, অমিতাভ রেজার ‘রিক্সা গার্ল’, কাজী হায়াতের ‘বীর”, মাসুদ হাসান উজ্জ্বল এর ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ (দীপঙ্কর দীপন+সিয়াম) এর নতুন সিনেমা মুক্তি পাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
যদি সব গুলো সিনেমা এই বছর মুক্তি পায় তাহলে ২০১৮ সালের মতো এই বছরও বাংলা চলচিত্রের একটা মাইলফলক বছর হয়ে থাকবে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা…